গাইবান্ধায় নদী ও সরকারী রাস্তার জমি ব্যক্তি মালিকায় নামজারীর অভিযোগ 275 0
গাইবান্ধায় নদী ও সরকারী রাস্তার জমি ব্যক্তি মালিকায় নামজারীর অভিযোগ
মোনায়েম মন্ডল,গাইবান্ধা থেকে:
গাইবান্ধার দাড়িয়াপুরের তহশীলদার আবুল হোসেন কর্তৃক নদীর ও সরকারি রাস্তার জমি মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে ব্যক্তি মালিকানায় নামজারিসহ তহশীল অফিসের জমি অন্যের দখলে ছেড়ে দেয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে !
অভিযোগে জানা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার অধীনে দাড়িয়াপুর তহশীল অফিসের তহশীলদার আবুল হোসেন উক্ত অফিসে যোগদানের পর থেকে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকদের সাথে আঁতাত করে সরকারি খাসজমি, এনিমির জমিসহ বিভিন্ন ভাবে সরকারি স্বার্থ জড়িত থাকা জমি নামজারির মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তন করে দেয়া অব্যাহত রেখেছে।
সুত্র জানায়, উক্ত তহশীল অফিসের আওতাভুক্ত দক্ষিণ ঘাগোয়া (পঁচারকুড়া) মৌজায় জনৈক দুদুর মিয়া তার স্ত্রী সাজেদা বেগমের নামে ৪৩ শতাংশ জমি নামজারি করে নেয়। এই ৪৩ শতাংশ জমির মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ নদীর মধ্যে, এক ভাগ সরকারি রাস্তা এবং এক ভাগ নিজের দখলে রয়েছে। এই ৪৩ শতাংশ জমি গত ১২/১২/২০১৯ ইং তারিখে নামজারির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। যার- মিউটেশন কেস নং ১৬৭২/১৯-২০, জমির মৌজা- দক্ষিণ ঘাগোয়া (পঁচারকুড়া), জমির দলিল নং ৯০২৮, খতিয়ান নং ১০৫৩। জমি ৪৩ শতাংশের মধ্যে দাগ নং ৯৫১১ এ ২৪ শতাংশ এবং ৯৫১৭ এ ১৯ শতাংশ। এই জমির অবস্থান নদীর ভিতরে ও সরকারি রাস্তার জমি হওয়ায় আবেদন পত্রটি নামঞ্জুর করে নথিজাত করা হয়েছে। কিন্তু তহশীলদার আবুল হোসেন মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে এই জমির আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার ৯ মাস পর গত ১/৯/২০২০ ইং তারিখে পচ্চা ঘষামাজা করে জমির খতিয়ান নং ১০৫৩ কে ১৮৭০ বানিয়ে এবং জমির দলিল নং সহ অন্যান্য তথ্য ঠিক রেখে অনলাইনে আবেদন করেন। যার মিউটেশন কেস নং ২৫৪/২০-২১।
এদিকে তিনি দাড়িয়াপুর তহশীল অফিসের সামনে পূর্ব পাশে কমপক্ষে দুই শতাংশ জমি তাঁর শিক্ষককে ছেড়ে দিয়ে সরকারি রাস্তার জমি দখল দেখিয়ে হিসাব মিলিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করেন। এছাড়াও উত্তর ঘাগোয়া মৌজায় হাসানুর রহমান নামের জনৈক ব্যক্তিকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে মিউটেশন কেস নং ৩৭০০/২০-২১ এ ৬৬ শতাংশ জমি নামজারি করে দেন। এই কেসটিতেও গুরুতর দূর্নীতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুত্র জানায়, এই নামজারির কেসে ভায়া দলিল কমপক্ষে ২০/২২টি এবং খতিয়ান ১৮/১৯টির প্রয়োজন হলেও অতিরিক্ত কোন ভায়া দলিল এবং অতিরিক্ত কোন খতিয়ান জমা না দিয়েই কমপক্ষে অর্ধ লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে নামজারি করা হয়েছে। যা কেসটিতে জমাকৃত নথিপত্র যাচাই করলে থলের বিড়ালের ন্যায় দূর্নীতির নাতি দীর্ঘ খতিয়ান বেড়িয়ে আসবে!
এ ব্যাপারে নদীর জমির বিষয়ে জমির মালিক সাজেদা বেগমের স্বামী দুদু মিয়া জমির সকল তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ, জমিটা ৭ হাজার টাকা দিয়ে খারিজ করে নিয়ে বিক্রি করে দিয়ে গাইবান্ধা সদরের বল্লমঝাড় ইউনিয়নের চকগয়েশ পুর গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করেছি।
তহশীলদার আবুল হোসেন ঘটনার সত্যতা কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সব সময় স্পটে গিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়া সম্ভব হয়না!
এ ব্যাপারে এসি ল্যান্ড নাহিদুর রহমানের সাথে গত ২৩ সেপ্টেম্বর/২০২১ ইং সাক্ষাৎ করলে তিনি তাৎক্ষণিক ভাবে অন লাইনে সার্স করে সুনির্দিষ্ট ভাবে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- তাড়াতাড়ি সম্ভব না হলেও আগামী ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে মিস কেসের মাধ্যমে মিউটেশন বাতিল করে সরকারি খাস খতিয়ানে ফেরত আনা এবং সংশ্লিষ্ট তহশীলদার আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন বলে আশ্বাস দেন।
সুতরাং উল্লেখিত ঘটনাবলিতে প্রতিয়মান হয় যে, দূর্নীতির সাথে শুধু তহশীলদারই জড়িত নয়, সংশ্লিষ্ট এসি ল্যান্ড অফিসের উদ্ধতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িত থাকতে পারে বলে এলাকার সচেতন মহল মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা একই সাথে বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জোর দাবি জানান।